"চিল্লাবানা, চিল্লাইলে আর বউ থাকবা না" বলার পরও স্ত্রী চিৎকার-চেচামেচি করলে তালাক হবে কি

মাসিক আল কাউসারবিবাহ-তালাক২ জানু, ২১

প্রশ্ন

১. সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি স্ত্রীর উপর রাগ করে ঠাণ্ডা মাথায় একবার একথা বলি, ‘আমার ছোট ছেলের ২ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তুমি তালাক’। একথা আমি একা একা বলি শব্দ করে। আবার প্রচন্ড রাগের মাথায় একা একা শব্দ করেও ঐ জাতীয় কথা আলাদা আলাদা দিনে কয়েকদিন বলি।

অতএব হুজুর সমীপে নিবেদন উপরিউক্ত কথাগুলোর ভিত্তিতে ফতোয়া জানিয়ে বাধিত করবেন।

২. আমার এবং আমার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকে। ঝগড়ার পর্যায়ে আমি আমার স্ত্রীকে এ কথা বলি- ‘বেশি চিল্লাবা না; আর বেশি চিল্লাইলে তুমি আমার বউ থাকবা না।’ এ কথার পরও সে অনেক চিল্লিয়েছে। ঐ কথা বলার সময় দিলের নিয়ত কী ছিল তা বুঝতে পারছি না। অতএব, উপরিউক্ত কথার ভিত্তিতে মেহেরবানী করে ফতোয়া জানালে বাধিত থাকব।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

১. আপনি যেহেতু আপনার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেই ঐ বাক্যটি (আমার ছোট ছেলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তুমি তালাক) বলেছেন, তাই যেদিন আপনার ছোট ছেলের দুই বছর পূর্ণ হবে, সেদিন আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হবে।

উল্লেখ্য, আপনার মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী আপনি প্রচন্ড মানসিক চাপের কারণে ঐ বাক্যটি পরবর্তীতে বারবার উচ্চারণ করছিলেন এবং তা বলার সময় নতুন করে শর্তযুক্ত তালাক প্রদানের নিয়ত আপনার ছিল না। যদি কথাগুলো সঠিক হয় তবে ঐ বাক্যগুলো দ্বারা নতুন করে কোনো তালাক পতিত হবে না।

আরো উল্লেখ্য, তালাকে রাজয়ীর পর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (ঋতুমতী হলে পূর্ণ তিন ঋতু, আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) আপনি চাইলে স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করতে হবে না।

আর আপনার মৌখিক বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ইতিপূর্বে স্ত্রীকে আরো একটি তালাক দিয়েছিলেন, তাই এ শর্তযুক্ত তালাকটি পতিত হওয়ার পর আপনি কেবল অবশিষ্ট এক তালাকের অধিকারী থাকবেন। কোনোভাবে এ তালাকটি হয়ে গেলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে এবং পরস্পরের জন্য আপনারা হারাম হয়ে যাবেন। তখন নতুন করে বিবাহ করার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

২. ‘আর বেশি চিল্লাইলে তুমি আমার বউ থাকবা না’ প্রশ্নের এ কথার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তাই আপনাদের বিবাহ যথারীতি বহাল আছে।

প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তে তালাকের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, রাগ বা স্বাভাবিক অবস্থায় এমনকি ঠাট্টাচ্ছলে দিলেও কার্যকর হয়ে যায়। তাই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথায় কথায় এ ধরনের ধমক দেওয়া ঠিক নয়। কেননা একটু অসতর্ক হলে বা শব্দের সামান্য হেরফেরের কারণে এ ধরনের বাক্য দ্বারা তালাক হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে। তাই ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মুসান্নেফে আবদুর রাযযাক, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৬,০৬২
  • কিতাবুল আছল, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৭১
  • কিতাবুল আছল, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৯৭
  • কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৬৯৩
  • আলমুহীতুল বুরহানী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৭৯
  • কিতাবুল আছল, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৫৬
  • বাদায়েউস সানায়ে, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৭১
  • আলইখতিয়ার, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৮০
  • আলবাহরুর রায়েক, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩০৫

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২ জানু, ২১